অসহায় শিক্ষামন্ত্রী

অসহায় শিক্ষামন্ত্রী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ স্তরের প্রশ্ন ফাঁস এখন মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও গুণীজনদের পরামর্শে অনেক পদক্ষেপ নিলেও কিছুতেই যেন থামানো যাচ্ছে না প্রশ্ন ফাঁস।

অসহায় শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা কিছু শিক্ষকের জন্য সমস্যাগ্রস্ত প্রশ্নফাঁসের কুফল সবাই জানে উল্লেখ করে মন্ত্রী বিভিন্ন সেমিনারে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেও প্রশ্নফাঁস রোধ করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এখন আবার বড়দের পাশাপাশি শুরু হয়েছে শিশুদের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস। চলতি বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় বরগুনার বিভিন্ন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন গত শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর সত্যতা নিশ্চিত করার পর তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস গতকাল রোববারের দ্বিতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর বরগুনা সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির তিন বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পেয়ে সদর উপজেলার ২৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বর্তমানে শিক্ষা খাতের এ করুণ পরিস্থিতি দেখে মাঠে নেমেছে দুদক টিম। দুদকের তদন্তকারীরা ধারণা করছেন যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘অসাধু’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্রও যুক্ত থাকতে পারে। প্রশ্নফাঁস, নোট-গাইড, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে ৩৯ দফা সুপারিশসহ এক প্রতিবেদন গত ১৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে পাঠায় দুদক। সএদিকে গতকাল সচিবালয়ে দুদক কমিশনার নাসির উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে শিক্ষাসংক্রান্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নফাঁস বন্ধে অনেক সাজেশন এসেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পরীক্ষার দিন আধঘণ্টা আগে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেয়ার কথা হয়েছে। কিন্তু আমরা যখন বুঝলাম আসল প্রশ্নফাঁসকারী তো শিক্ষক তখন আধঘণ্টা আগে দিয়েই লাভ কী। মন্ত্রী আরো বলেন, কিছু শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে বাড়িতে বা কোচিংয়ে পড়ান। যত ভালো শিক্ষক ক্লাসে তত কম পড়ান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে তারা একসঙ্গে কাজ করবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষকদের লোভ দেখায় যে, কোনোভাবে প্রশ্নফাঁস করে তাদের শিক্ষার্থীদের ভালো ফল করাতে পারলে কোচিং-ব্যবসা ভালো হবে। টাকা আয়ের পরিমাণটাও বাড়বে। এসব লোভের কারণে শিক্ষকরাই কোচিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। তিনি আরো বলেন, আমরা শিক্ষা আইনটি চূড়ান্ত করেছি। আইনটি হলে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারবো। কোনো আইন না থাকায় কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় না। তারা আদালতে গিয়ে ছাড় পেয়ে যায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment